গত সাত বছর বিপুল পরিমান মুনাফা লাভ করেছে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। জমা হয়েছে বিপুল পরিমান অর্থ তাদের তহবিলে। তবে সে অর্থ সরকার তাদরে কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা মনে করছেন, যদি সরকার এই টাকা না নিত তাহলে অন্তত ছয় মাস ডিজেল ও কেরোসিনের দাম না বাড়িয়েও চলা যেত।
সরকারের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকার বেশি। এই মুনাফার মধ্যে ভাগ বসিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বিপিসির তহবিল থেকে বিভিন্ন সময় ১০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আরো পড়ুন: জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ফুলটস, পরিবহন মালিকদের ছক্কা
সরকার বিপিসির তহবিল থেকে ফান্ড নেওয়ার কারনে বিপিসি তাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করতে হচ্ছে নিজস্ব অর্থ। এদিকে গত পাঁচ মাসে ডিজেল বিক্রিতে ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা লোকসান হয় বিপিসির।
একদিকে অর্থমন্ত্রনালয় কর্তক ফান্ড নিয়ে যাওয়া অন্যদিকে ডিজেল বিক্রিতে লোকসান হওয়া এই দুই কারণে গত বুধবার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো লিটার প্রতি ১৫ টাকা। ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারনে রোববার দেশে বাসভাড়া ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, করোনাকালে দেশের অর্তনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় রয়েছে অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ছয় মাস থেকে এক বছর ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল রাখা দরকার ছিল।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম. তামিম এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এর মতে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই গুরুত্বপূর্ন সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো অনাকাঙ্ক্ষিত।
দাম বাড়ানো নিয়ে জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে এই আলাপকালে তারা জানান, দাম না বাড়ালেও বছর শেষে বিপিসির লোকসান কিছুতেই আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি হতো না। এ পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়ে বা কর ছাড় দিয়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এড়ানোর সুযোগ ছিল।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, বিগত সময়ের লাভের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারের অর্থ মন্ত্রনালয় না নিয়ে গেলে মূল্য না বাড়িয়েও হয়তো আরও ছয় মাস বিপিসি চালিয়ে নিতে পারত। তিনি বলেন, মুনাফা করা বিপিসির লক্ষ্য নয়।
কিন্তু অব্যাহত ভাবে ঘাটতি বাড়তে থাকলে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বিষয়টি সরকারকে জানানোর পর সরকার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিপিসি তা বাস্তবায়ন করছে।