বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার রায় আজ ঘোষণা করার কথা। ইতোমধ্যে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ২২ আসামির সবাইকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
উভয় পক্ষের আইনজীবিদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণার জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখটি নির্ধারণ করেন।
আরো পড়ুন : ডিসেম্বরের প্রাথমিকে ৩২ হাজার ৭০০ শিক্ষক নিয়োগ
হত্যাকাণ্ডের দুই বছর দুই মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর মামলার রায় হতে পারে আজ। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চায় আবরারের পরিবার।
পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও আসামিদের সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডের আশা করছে।
আসামিপক্ষের দাবী, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনীত অভিযোগ যথাযথভাবে প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই তারা খালাস পাওয়ার যোগ্য।
রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল এ হত্যাকান্ডের জড়িত জড়িত ২৫ আসামির সকলর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অপর প্রসিকিউটর প্রশান্ত কুমার কর্মকার সাংবাদিকদের বলেন, বুয়েটির ছাত্র আবরার হত্যা মামলায় ২৫ জন আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করছি, রায়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনপ্রিয় সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাহাদ রাব্বী। এই ঘটনার পরদিন ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।
তারা আবরারের ১০১১ নম্বর কক্ষে গিয়ে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল নিয়ে যায় এবং তাকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। এরপর ওই কক্ষে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী চলাতে থাকে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে আবরার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পরে রাত ৩টার দিকে পুলিশ আবরারের লাশ শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার পরদিন গেল ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে সন্তানকে হত্যার দায়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মাঠে নামেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার একমাস ছয়দিন পর ১৩ নভেম্বর ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। উক্ত মামলায় ২৫ জন আসামির মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ জন। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আরও ৬ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় বলে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অভিযুক্তদের মধ্যে আটজন ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২৫ আসামির মধ্যে বাকি ২২ জন কারাগারে, আর বাকী তিনজন বুয়েট শিক্ষার্থী মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ র্বতমানে পলাতক।
অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আরো উল্লেখ করা হয়, ছাত্রশিবির সন্দেহে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আবরারকে মিথ্যা, বানোয়াট,এবং ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, তারা আবরারকে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট স্টাম্প ও স্কিপিং রোপ দিয়ে নির্মমভাবে পিটাতে থাকে এবং একই সাথে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি, লাথি মেরে হত্যার কাজটি সমাপ্ত করে, যার মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
ঘটনার তারিখ ও সময়ে আসামি এস এম মাহমুদ সেতু ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং আবরারকে হত্যার জন্য হুকুম দেন যা প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড আইনের ৩০২/১০৯/১১৪/৩৪ ধারায় চার্জশিট দাখিল করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।